ভূগোলের দৃষ্টিতে চাঁদের পাহাড়
Wednesday, 24 August 2022
বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড়ের মানচিত্র
Monday, 1 February 2021
রেডিওর জন্য বিজ্ঞান নাটক
সোনালী দিনের কথা
সাইট ও দুরদর্শন (2012)
রচনাঃ সায়েন্স কমিউনিকেটার্স ফোরামের
পক্ষে প্রদীপ সেনগুপ্ত
| পরমা | এই কপিল, টিভি তে দাদাগিরি দেখিস? | 
| কপিল | কোনটা? বাংলা না হিন্দি? | 
| পরমা | দুটোই, দেখিস? | 
| কপিল | দূর আমাদের বাড়িতে কেবল নেই। কেবল ওয়ালাদের কি একটা ঝগড়া
  হয়েছে। ব্যাস আমাদের চার পাশের কয়েকটা বাড়িতে কোনও চ্যানেলই আসেনা। | 
| পরমা | তাহলে কি করিস? টিভি দেখিস না তোরা? | 
| কপিল | আমার একটু অসুবিধা হয়, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক টা নিয়মিত
  দেখতাম তো। আর খেলার চ্যানেলগুলোও দেখা হয় না। তবে সবচেয়ে অসুবিধা হয় দাদুর।
  ওনার সময় কাটেনা। | 
| পরমা | তা তুই তো আমাদের মত করে নিতে পারিস। আমাদের বাড়িতে যে
  রকম আছে। | 
| কপিল | কি করতে পারি? | 
| পরমা | ডিশ লাগিয়ে নিতে পারিস। | 
| কপিল |  ডিটিএইচ? তা
  লাগাতে পারি। কিন্তু ওতে সব কটা লোকাল বাংলা চ্যানেল আসেনা। দাদুর সুবিধা হবে
  না। | 
| পরমা |  তুই দাদুর কথা
  খুব ভাবিস, তাই না রে? | 
| কপিল |  ভাবব না? দাদুই
  তো আমাকে মানুষ করেছেন। আমার বাবা মা তো সেই কবে আমার ছোট বেলায় মারা গিয়েছেন। | 
| পরমা |  আমি জানি রে সে
  কথা। সেই যে দারজিলিং এর রোপ ওয়ে দুর্ঘটনা... (পরমা হঠাৎ চুপ করে যায়) সরি রে
  কপিল। এই আলোচনা করব না। বরং চল তোর দাদুর সাথে আলাপ করে আসি। | 
| কপিল |  (খুসি হয়ে) যাবি?
  দাদু তা হলে খুব খুসি হবেন। দাদু প্রায় আমার সব বন্ধুকেই দেখেছেন। তোকেই দেখেন
  নি। | 
| পরমা | তোর দাদু কি খুব রাগী? | 
| কপিল |  দূর! রাগী হবেন
  কেন? দাদু খুব মজার মানুষ। সারা জীবন গ্রামেই কাটিয়েছেন। গ্রামের কলেজেই
  পড়িয়েছেন। ভেবেছিলেন গ্রামেই থাকবেন।শুধু আমার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বাস
  করতে হচ্ছে তাকে। | 
| পরমা | তা হলে বিকেলের চা টা তোর বাড়িতেই খাওয়া যাবে। | 
| কপিল |  চা তোকেই বানাতে
  হবে। আজ কাজের মাসি ছুটি নিয়েছে। | 
| পরমা | নো প্রব্লেম, আমি ভালো চা বানাতে পারি। তা টিভি নেই, তোর
  দাদু সময় কাটায় কি করে।  | 
| কপিল |  দাদুর বই পড়ার
  অভ্যাস আছে। তা ছাড়া উনি রেডিও শোনেন খুব।  | 
| পরমা | রেডিও শোনেন? আজাকাল শহরের লোকেরা রেডিও শোনে নাকি? যারা
  শোনে তারা কেবল এম এম শোনে। | 
| কপিল |  দাদু খুব শোনেন।
  দাদু বলেন টিভি হল বোকাদের বাক্স। ওখানে কল্পনার গলা টিপে মারা হয়। রেডিও হল
  মানুষের মনে কল্পনার ডানা মেলে দেওয়ার যন্ত্র। | 
| পরমা | দাদু কি কি অনুষ্ঠান শোনেন রেডিওতে?  | 
| কপিল | বেশিরভাগই খবর আর গান শোনেন আকাশবানীতে। তবে একটা
  অনুষ্ঠান দাদুর খুব প্রিয়, তা হল প্রতি রবিবারের সকালে বিজ্ঞান নিয়ে নাটক। ওটা
  দাদু খুব মন দিয়ে শোনেন। | 
| পরমা | দুর! আমি ভাবলাম দাদু এফ এম শোনেন বোধ হয়। তোর বাড়ি গিয়ে
  অন্ততঃ এফ এম নিয়ে দাদুর সাথে গল্প করা যাবে। | 
| কপিল  | তুই যা নিয়েই গল্প করিস না কেন, দেখবি দাদু সেই বিষয়েই
  তোর থেকে ভালো জানেন। | 
| 
 | 
 | 
| 
 | (দৃশ্যান্তরের সংগীত) | 
| কপিল | এই যে আমাদের বাড়ি এসে গিয়েছি। | 
| পরমা | তোদের পাড়ায় অনেক গাছ আছে দেখছি।  | 
| কপিল | এটা এই পাড়ার বিশেষত্ব। সবাই গাছ ভালোবাসে। দাদুও প্রতি
  বছর পাড়ায় রাস্তার ধারে গাছ লাগান। | 
| পরমা | বাড়িতে ঢুকবি কি করে? তোদের কাজের লোক আসেনি বললি। তোর
  দাদুকে সেই ওপর থেকে নামতে হবে। | 
| কপিল |  না, দাদুকে নামতে
  হবে না। আমার কাছে চাবি আছে, চল সোজা ওপরে দাদুর ঘরে যাই। | 
| পরমা | দাদু ঘুমাচ্ছেন না তো রে! | 
| কপিল | না না, দাদু এ সময় শুয়ে শুয়ে বই পড়েন। আয় ওপরে চল। | 
| 
 | (সময়ান্তরের সঙ্গীত) | 
| কপিল | দাদু, ব্যাস্ত নাকি? ভেতরে আসব। | 
| দাদু |  তুমি আবার কবে
  থেকে অনুমতি নিয়ে আমার ঘরে ঢোকো? আজ আবার কি হল? | 
| কপিল | আজ আমার সাথে এক বন্ধু আছে। পরমা। আমার কলেজের বন্ধু। | 
| দাদু |  তাই বুঝি? এসো
  এসো, একেবারে ভেতরে চলে এসো। পরমা? তোমার নামটা খুব সুন্দর। | 
| পরমা | শুধু নাম সুন্দর দাদু? কেন, আমাকে সুন্দর মনে হচ্ছে না? | 
| দাদু | অবশ্যই, কিন্তু আজ এই অসময়ে দুপুর বেলা, শীতের রোদে দুজনে
  পার্কে না ঘুরে একেবারে আমার ঘরে এলে কেন? | 
| পরমা | বিশেষ একটা উদ্দেশ্য আছে। কপিল বলছিল আপনাদের নাকি কেবল
  টিভি নেই। | 
| দাদু |  হ্যাঁ, একটা কি
  গন্ডগোল হয়েছে। কেবলে কোনও চ্যানেলই আসছেনা। কি করব ভাবছি। | 
| কপিল | পরমা একটা কথা বলছিলো। ও বলছিলো ছাদে ডিশ অ্যান্টেনা
  লাগিয়ে নিতে। তাহলে কেবলের লোকদের আর তেল দিতে হবে না। | 
| দাদু | খরচ কিরকম লাগবে? | 
| কপিল |  তা একটু বেশি
  লাগবে, কিন্তু ঝামেলা অনেক কম। | 
| পরমা | ওটাই লাগিয়ে নিন দাদু। নতুন যুগে নতুন টেকনোলজি। | 
| দাদু | তুমি এটাকে নতুন টেকনোলজি বলছ নাকি? | 
| পরমা |  নতুন নয়? এইতো
  মাত্র কয়েক বছর হল আমাদের দেশে এই ডি টি এইচ টেকনোলজি চালু হয়েছে। এখন ঘরে বসেই
  সরাসরি স্যাটেলাইটের সাথে লিঙ্ক করে নেওয়া যায়।  | 
| কপিল | তুই দাদুকে কি শেখাচ্ছিস? দাদুর কাছে কিছুই অজানা নয়। | 
| পরমা | আমি তা বলছিনা। দাদু অবশ্যই জানেন এ ব্যাপারে। কিন্তু উনি
  বলছেন এটা নতুন টেকনোলজি নয়। | 
| দাদু | তুমি যাই বল পরমা দিদি। এই টেকনোলজি এই ভারতে চালু হয়েছে
  বহু আগে। আজ থেকে পয়ত্রিশ বছর আগে। | 
| কপিল | বল কি দাদু অত আগেই ডিটি এইচ ছিলো ? | 
| দাদু | ছিলো মানে! ভীষণ রকমভাবে চালু ছিলো, তাও আবার গ্রামে। | 
| পরমা | আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন দাদু। | 
| দাদু |  তোমার সাথে যে
  আমার সম্পর্কটাই ঠাট্টার। কিন্তু এটা ঠাট্টা নয়। সত্যিই ভারতের গ্রামে গ্রামে
  পয়ত্রিশ বছর আগেও টি ভি ছিল। | 
| পরমা | কি করে তা হয়? পয়ত্রিশ বছর আগে, যতদূর জানি ভারতের
  বেশিরভাগ শহরেই টিভি ছিলোনা। গ্রামে কি করে টিভি এলো? | 
| দাদু |  তুমি ঠিক বলেছ
  দিদি। সে সময়ে মাত্র সাতটা শহরে টেলিভিশন স্টুডিও ছিল। কেবল মাত্র শহরের লোকেরাই
  সেই প্রোগ্রাম দেখতে পেতো। কিন্তু সেই সময়েই গ্রামেও টিভি দেখা যেতো। | 
| কপিল |  কিন্তু কি ভাবে
  হত? | 
| দাদু |  এখন যেমন ডিরেক্ট
  টু হোম বা ডিটিএইচ সিস্টেম রয়েছে ঠিক সেই রকম গ্রামেও ডিশ অ্যান্টেনার সাহায্যে টেলিভিশন
  চলত। | 
| পরমা | কিতু সে সময়ে এই ধরণের স্যাটেলাইট ছিলো? এখন যেমন
  ইন্স্যাট রয়েছে? | 
| দাদু | না সে সময়ে ইনস্যাট ছিল না। ভারতের স্পেস প্রোগ্রাম সে
  সময়ে ঠিকমত শুরু হয়নি। কিন্তু সে সময়েই ভারতের গ্রামে টেলিভিশন পৌঁছে গিয়েছিলো। | 
| কপিল | এ তো তুমি রূপকথার গল্প শোনাচ্ছো দাদু। | 
| দাদু | শুনতে রূপকথার মতই শোনাবে। কিন্তু এ একেবারে সত্যি গল্প। | 
| পরমা | দাঁড়ান দাদু, আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি আগে। কপিল তোদের
  রান্নাঘরটা কোথায় রে? | 
| কপিল |  চল দেখিয়ে
  দিচ্ছি। কিন্তু আমাকে কোনও ফরমাশ করতে পারবি না। | 
| পরমা | (রাগ করে)বাঃ বেশ বলেছিস? তোর বাড়িতে আমার কাজ করতে
  হচ্ছে। আমার একটু তো অসুবিধা হতেই পারে। তাই বলে তুই আমাকে সাহাযা করতে পারবিনা? | 
| কপিল | ঠিক আছে, ঠিক আছে, চল আমি দেখিয়ে দিচ্ছি কি করতে হবে। | 
| 
 | (সময়ান্তরের সঙ্গীত) | 
| পরমা | দাদু চা,  | 
| কপিল | খেয়ে দেখ দাদু, সব কিছু ঠিক ঠাক আছে নাকি। | 
| দাদু | (চায়ে চুমুকের শব্দ) আঃ, বেশ চা হয়েছে। তবে মিষ্টি একটু
  কম হলে ভালো হত। | 
| পরমা |  চিনি ওই কপিল
  দিয়েছে। | 
| কপিল | তুই তো আমাকে চিনি দিতে বললি। | 
| পরমা |  তাই বলে অতগুলি
  করে দিবি? | 
| দাদু |  না না, ঝগড়া নয়,
  তা হলে গল্প হবে না। | 
| কপিল |  ঠিক আছে, আমি
  ঝগড়া করবানা। দাদু তুমি বল গ্রামে টিভি এলো কি ভাবে। | 
| দাদু | গ্রামে টিভি শুরু হয়েছিলো একটু অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে। সে
  সময়ে ভারতে সদ্য টেলিভিশন এসেছে শহরে। তখন ভাবা হল গ্রামে শিক্ষার প্রসারের জন্য
  টেলিভিশনের মত শক্তিশালী মাধ্যমকে ব্যবহার করা যায় কিনা। | 
| কপিল | খুব ভাল উদ্দেশ্য। কিন্তু ভারতের তো তখন নিজস্য কোনও
  স্যাটেলাইট ছিলোনা। | 
| দাদু | সেজন্য আমেরিকার একটি স্যাটেলাইট ধার করা হল। | 
| পরমা  | কি নাম অই স্যাটেলাইটের? | 
| দাদু | একটু ভাবতে হচ্ছে। তবে ওটা ছিলো নাসার স্যাটেলাইট, এই তো
  মনে পড়েছে, নাম ছিল এ টি এস সিক্স। জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। | 
| পরমা | আমেরিকার স্যাটেলাইটে আমাদের কাজ হল? | 
| দাদু | হবে না কেন? অসুবিধা ছিল একটাই। আসলে সেই স্যাটেলাইটটা
  ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের ওপরে। সেখান থেকে দিল্লীর সাথে যোগাযোগ ঠিকমত করা
  যাচ্ছিলনা। তাই ভারতের অনুরোধে সেটাকে সরিয়ে নিয়ে আসা হল কেনিয়ার ওপরে। | 
| পরমা | বাঃ , কার মাথা থেকে বেরিয়েছিলো এই সব? | 
| দাদু |  তাঁর নাম
  প্রফেসার সতীশ ধাওয়ান। তিনি ছিলেন এই ব্যাপারে পথিকৃৎ | 
|  কপিল |  কোন সালে শুরু
  হয়েছিলো এই প্রোগ্রাম? | 
| দাদু | ১৯৭৫ সালে। ভেবে দ্যাখ, সে সময়ে কলকাতায় ঘরে ঘরে সাদা
  কালো টিভি, শুধু মাত্র শহরের লোকেরাই সেই প্রোগ্রাম দেখে। কিন্তু গ্রামে গ্রামে
  ডিশ অ্যান্টেনার সাহায্যে টেলিভিশন পৌঁছে গিয়েছে। | 
| পরমা | চব্বিশ ঘন্টা গ্রামে সেই প্রোগ্রাম হত? | 
| দাদু | না না,এটা ছিল একটা পরীক্ষামূলক কাজ। মানুষ কি ভাবে এই
  নতুন সিস্টেমকে গ্রহণ করে সেটা দেখা। তা ছাড়া গ্রামের লোকেদের অত সময় নেই টিভি
  দেখার। | 
| কপিল | কখন কখন এই প্রোগ্রাম হত? | 
| দাদু | সকালে আধ ঘন্টা হত বাচ্চাদের জন্য, আর সন্ধ্যায় হত দুই
  ঘন্টার প্রোগ্রাম। | 
| পরমা | এটা পরীক্ষামূলক বলছেন কেন? | 
| দাদু | পরীক্ষা নয়? নতুন একটা মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে শিক্ষিত
  করে তোলার এই প্রচেষ্টার নাম ছিলো স্যাটেলাইট ইনস্ট্রাকশনাল টেলিভিশন
  এক্সপেরিমেন্ট বা সংক্ষেপে সাইট। | 
| পরমা | সাইট নামটা কিন্তু খুব সুন্দর, একটা দৃষ্টিভঙ্গী
  পরিবর্তনের আভাস রয়েছে নামটার মধ্যে। | 
| দাদু | অবশ্যই, ভারত যে ক্রমে ক্রমে আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ভারত
  হয়ে দাঁড়াবে তারই আভাস ছিলো নামটার মধ্যে। | 
| পরমা | সব গ্রামেই এক সাথে শুরু হয়েছিলো? ওই দু হাজার চারশো
  গ্রামে? | 
| দাদু | এক দিনেই শুরু হয়েছিল।দিনটা ছিলো পয়লা আগস্ট উনিশশ
  পচাত্তর, ভারতের দু হাজার চারশো গ্রামে সেদিন টেলিভিশনের প্রোগ্রাম শুরু হল
  (দূরদরশনের সিগনেচার টিউন বাজবে) | 
| কপিল | অ্যান্টেনাগুলো কত বড় ছিল? এখনকার ডিশ অ্যান্টেনার মতই
  ছিল?  | 
| দাদু | এই সাইট প্রোগ্রামের অ্যান্টেনা ছিল তিন মিটার ব্যাসের।
  আজকাল কেবল অপারেটাররা যেরকম অ্যান্টেনা ব্যবহার করে অনেকটা সেরকম। | 
| কপিল | দারুন ব্যাপার তো! প্রোগ্রাম কোনখান থেকে সম্প্রসার হত? | 
| দাদু |  প্রোগ্রাম
  সম্প্রসার হত দিল্লী থেকে। কিন্তু ভারতের স্পেস রিসার্চ সেন্টার বা ইসরো এর একটা
  মুখ্য ভূমিকা পালন করত। | 
| কপিল | তারাই এটা পরিচালনা করত? | 
| 
 | আসলে পুরো প্রোগ্রামের ডিজাইন হয়েছিলো আমেদাবাদের স্পেস
  অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকে। এটা ইসরো র অধীনে একটা সংস্থা। আর এই পুরো
  প্রোগ্রামের পেছনে ছিলো ডঃ বিক্রম সারাভাইয়ের স্বপ্নকল্পনা। আর একজনের কথাও বলতে
  হয়। | 
| পরমা | কে? | 
| দাদু |  তিনি হলেন ডঃ যশ
  পাল। তিনি প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারকে বিশাল এক কর্মযজ্ঞে
  পরিণত করেছিলেন। | 
| কপিল |  আমার ভাবতে খুব
  অবাক লাগছে, সেই সময় গ্রামের লোকেদের কিভাবে শিক্ষা দেওয়া হত টেলিভিশন ব্যবহার
  করে? | 
| পরমা | সিনেমার গান হত না? | 
| দাদু | সিনেমার গানের মধ্যে শিক্ষামূলক কিছু থাকে নাকি দিদি? | 
| পরমা | ও সবটাই শিক্ষামূলক ছিলো? | 
| দাদু |  আসলে গ্রামের
  মানুষের স্বাস্থ্য, তাদের চাষবাসের সমস্যা, জালের সমস্যা এই সব নিয়ে শিক্ষা
  দেওয়া ছিল এই প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য। প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ওই গ্রামগুলোর লোকের
  কাছে পৌছানো। ঠিক হয়েছিল প্রতি একশো জন লোক পিছু একটি করে সেট থাকবে। | 
| কপিল | দাদু তুমি কোনও প্রোগ্রাম দেখেছ? | 
| দাদু | আসলে আমাদের গ্রাম সাইট প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত ছিলোনা।
  কিন্তু আমি বিহারের কয়েকটা গ্রামে গিয়ে এই প্রোগ্রাম দেখেছি। | 
| কপিল |  কি হত সেই
  প্রোগ্রামে? | 
| দাদু | একদিন সন্ধ্যার প্রোগ্রাম আমার মনে আছে। আমরা সবাই গিয়ে
  গ্রামের একটা বিশেষ জায়াগায় বসলাম। প্রথমে দেখানো হল বিদ্যুত নিয়ে একটা
  প্রোগ্রাম, কি ভাবে বিদ্যুত তৈরি হয়, তারপর কি ভাবে তা ব্যবহার করা হয় এই সব। | 
| কপিল |  আর কিছু হত না? | 
| দাদু | হত। সব প্রোগ্রামই ছিলো গ্রামের মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর
  জন্য। আর এই সব প্রোগ্রাম কম জনপ্রিয় ছিলোনা। বিশেষ করে কৃষি সেচ অ জলের সঠিক
  ব্যভার নিয়ে সব অনুষ্ঠানই খুব জনপ্রিয় ছিল। | 
| পরমা | আচ্ছা দাদু এই প্রোগ্রামে তো আমেরিকা থেকে উপগ্রহ ধার করা
  হয়েছিলো কিন্তু বাকি কাজটা তো ভারতের বিজ্ঞানীরাই করেছিলেন। | 
| দাদু | অবশ্যই, সেই কাজটাও কম বিশাল ছিলোনা। ভেবে দ্যাখ, এর
  মধ্যে দুটো সংস্থাকে একসাথে কাজ করতে হয়েছে। একটা হল স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার
  আর একটি হল দূরদর্শন। আর একটা কাজ ছিলো মাটি থেকে মহাকাশে প্রোগ্রাম পাঠানো আর
  অ্যান্টেনার সাহায্যে তাকে টিভির পর্দায় নিয়ে আসা। | 
| পরমা | দূরদর্শণের কাজ কি ছিল? প্রোগ্রাম বানানো? | 
| দাদু | সম্প্রসারণের মূল কাজটা তারাই করত। স্পেস অ্যাপ্লিকেশন
  সেন্টার ছিল টেকনিক্যাল ব্যাপারটা দেখার দায়িত্বে। তারা আর একটা বিষয় দেখত, তা
  হল গ্রামের নব্বই শতাংশ টেলিভিশন যেন চালু অবস্থায় থাকে। | 
| কপিল |  বিশাল কাজ। | 
| দাদু | স্যাটেলাইট আপলোডের জন্য দুটো আর্থ স্টেশন বসানো হয়েছিল।
  একটা পুনের কাছে আরাভি তে আর একটা দিল্লীতে শুধু মাত্র সাইটের জন্য। | 
| কপিল | সোজা কথা নয়। দেখ পরমা তুই তো দাদুকে ডিশ অ্যান্টেনা
  বসাতে বলেছিলি, আর দাদু তোকে কিরকম বুঝিয়ে দিলেন যে ওটা নতুন কিছুই নয়। | 
| দাদু | না দাদুভাই, এটা ঠিক কথা হলনা। আজাকের ডিটিএইচ প্রযুক্তি
  ভাবনা হিসাবে নতুন না হলেও এক কালে যা শুধুমাত্র গ্রামে সীমাবদ্ধ ছিল, তাও
  সরকারী প্রোগ্রাম হিসাবে, তাকে তো মানুষের ঘরে ঘরে নিয়ে এসেছে। একে আমি ছোট করতে
  পারি না। | 
| পরমা | কিন্তু আপনি কি ঠিক করলেন? ডি টি এইচ লাগাবেন? | 
| দাদু | আমি ভাবছি অন্য একটা কথা। নতুন প্রযুক্তি এলো ঠিকই কিন্তু
  তার ভেতর দিয়ে ভারতের বিশাল জ্ঞানভান্ডার মানুষের ঘরে ঘরে পৌছালো কই? | 
 
