| 
 
 | 
(নেপথ্যে) | 
  | 
 | 
জয়
  রাজা হবুচন্দ্রের জয়  | 
  | 
 | 
জয়
  মন্ত্রী গবুচন্দ্রের জয় | 
  | 
রাজা | 
মন্ত্রী।এর
  একটা বিহিত হওয়া দরকার | 
  | 
মন্ত্রী | 
কিসের
  বিহিত মহারাজ? | 
  | 
রাজা | 
তুমি
  তো কিছুরই খোঁজ রাখো না। আবার মন্ত্রী হয়েছ।  | 
  | 
মন্ত্রী | 
সে
  আপনার দয়ায় মহারাজ। কিন্তু কিসের বিহিত দরকার, তাতো বললেননা মহারাজ। | 
  | 
রাজা | 
তুমি
  আমার পা দুটোর দিকে তাকিয়ে দেখেছ? | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
অপূর্ব
  সুন্দর চরণ দুখানি আপনার, মহারাজ। আমরা তো ওই চরণেই আশ্রয় পেয়েছি।  | 
  | 
রাজা | 
ন্যাকামি
  রাখো। চরণে আশ্রয় পেয়েছ তো চরণ দুখানির জন্য কী ব্যবস্থা করেছ? | 
  | 
মন্ত্রী | 
কী
  ব্যবস্থা চাই মহারাজ? আপনার জন্য সোনার পা দানি এনে রেখেছি। দরকার হলে হীরে দিয়ে
  মুড়িয়ে দেব।  | 
  | 
রাজা | 
এই
  জন্যই বলি, মন্ত্রী হয়েছ, কিন্তু বুদ্ধিশুদ্ধি একেবারেই হল না। আমার পায়ের দিকে
  একবার তাকিয়ে দেখ। পায়ের ধুলো দেখেছ? | 
  | 
ীমন্ত্রী
   | 
ও
  পায়ের ধুলো? সেতো আমাদের আশীর্বাদের জন্য, মহারাজ। আপনার পায়ের ধুলো আমরা মাথায়
  করে রাখি।  | 
  | 
রাজা | 
খালি
  খালি একগাদা বাজে কথা বল কেন বলতো? আমি বলতে চাই, আমি এই যে হাঁটছি তাতে আমার
  পায়ে ধুলো লাগবে কেন?  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
দেখুন
  মহারাজ, ধুলো তো লাগবেই। এই পৃথিবীর সর্বত্রই তো ধুলো। মাঠে ধুলো, পথে ধুলো,
  বাজারে ধুলো। হাঁটতে গেলে পায়ে একটু আধটু তো ধুলো লাগবেই। | 
  | 
রাজা
   | 
এইবার
  পয়েন্টে এসো।  আমি হাঁটবো আর পায়ে ধুলো
  লাগবে এ তো চিরকাল চলতে পারেনা। এরই এর একটা বিহিত তোমার কাছে চাইছি। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
বিপদে
  ফেললেন মহারাজ। এত ধুলো, এর কী ব্যবস্থা যে করি।  | 
  | 
রাজা | 
ব্যবস্থা
  তোমাকে করতেই হবে। চিরকাল বসে বসে মাইনে নেবে, এতো চলতে পারে না।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
আমার
  একটা বুদ্ধি মাথায় এসেছে। | 
  | 
রাজা
   | 
তোমার
  মাথায় বুদ্ধি? বেশ বল কি বুদ্ধি এসেছে। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
আচ্ছা
  মহারাজ, সব ধুলো ঝাড়ু মেরে দূর করে দিলে হয় না?  | 
  | 
রাজা
   | 
উফ,
  কি বুদ্ধি তোমার। ওই সব ধুলো উড়ে এসে নাকে মুখে ঢুকুক আর কি। ওসব চলবেনা। অন্য
  বুদ্ধি দেখ। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
(কিছুক্ষণ
  ভেবে)আমি বলিকি মহারাজ, রাস্তাঘাট, মাঠ সব চামড়ায় ঢেকে দি। তাহলে সব ধুলো ঢাকা
  পড়ে যাবে। আপনি মশ মশ করে চামড়ার ওপর দিয়ে হেঁটে যাবেন। পায়ে আর ধুলো লাগবে না।  | 
  | 
রাজা | 
বুদ্ধিটা
  মন্দ নয়। কিন্তু এত চামড়া তুমি পাবে কোথায়?  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
সে
  আমি ব্যবস্থা করব। নগরের চর্মকারকে খবর দিচ্ছি।  | 
  | 
 | 
(সময়ান্তরের
  সংগীত)  | 
  | 
রাজা
   | 
কী
  খবর মন্ত্রী। তোমার চর্মকারের কী খবর?  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
সে
  তো মহারাজ সেই সকাল থেকে এসে বসে আছে।  | 
  | 
রাজা
   | 
বেশ,
  ডাকো তাকে।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
প্রণাম
  হই মহারাজ। আমি এ রাজ্যের চর্মকার।  | 
  | 
রাজা
   | 
তাই
  বুঝি? তা মন্ত্রী তোমাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে তো?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে
  মহারাজ। বুঝেছি, আবার বুঝিনি।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
কিরে
  ব্যাটা? বুঝিসনি কি? তোকে না ব্যাপারটা সবিস্তারে বুঝিয়ে দিলাম, আর এখন বলছিস
  বুঝিনি?  | 
  | 
চর্মকার | 
আজ্ঞে
  মহারাজ, বুঝিনি তা বলব না। কিন্তু একে বারেই যে বুঝতে পারিনি।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
ব্যাটা
  বদমাশ। তোকে না বললাম সব কিছু চামড়া দিয়ে মুড়ে দিতে হবে। বললাম না অনেক টাকা
  ইনাম পাবি। বলিনি আমি?  | 
  | 
চর্মকার | 
আজ্ঞে,
  ওই ইনামটা বুঝেছি। বাকিটুকু বুঝিনি। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
টাকাটা
  বুঝেছ আর কাজটা বোঝোনি? তোমার গলাটা এবার যাবে। আমার সাথে চালাকি?  | 
  | 
রাজা | 
থাম
  মন্ত্রী। ও কি বলছে একটু শুনি। ওহে, তুমি তো চর্মকার? | 
  | 
চর্মকার | 
আজ্ঞে
  না মহারাজ। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
মানে?
  তুই চামড়ার কাজ করিস না?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে
  করি। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
তাহলে
  বলছিস কেন তুই চর্মকার নস। | 
  | 
রাজা | 
তা
  হলে তুমি বলছ কেন তুমি চর্মকার নও? | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে,
  আমি চর্মকার নই, আমি চর্মবিদ। | 
  | 
রাজা
   | 
ওই
  একই হল। তুমি চামড়ার কাজ কর?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে
  মহারাজ, সেটাই তো আমার কাজ। | 
  | 
রাজা | 
তা
  হলে মন্ত্রী যা বলছেন তা করতে পারবেনা কেন? মন্ত্রী মাথা খাটিয়ে একটা বুদ্ধি বার
  করলেন। আর তুমি সেটা পারবেনা বলছ? তোমার আসপর্দা তো কম নয়।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
ঠিক
  কথা মহারাজ। ওর খুব বাড় বেড়েছে। জল্লাদ কে ডাকি তাহলে।  | 
  | 
রাজা
   | 
না
  না মন্ত্রী, অতা তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবেনা। আগে জানি ও কেন পারবেনা বলছে। ওহে
  চর্মকার এবার বলত, মন্ত্রী মশাই তোমাকে কি করতে বলেছেন? | 
  | 
চর্মকার
   | 
সে
  মহারাজ এক অসম্ভব কাজ। রাস্তাঘাট, মাঠ বাগান সব নাকি চামড়া দিয়ে মুড়ে দিতে হবে। | 
  | 
রাজা
   | 
হবেই
  তো, আমই যখন হাঁটব আমার পায়ে ধুলো লেগে যাবেনা তা নইলে ? | 
  | 
চর্মকার
   | 
তা
  তাবার হয় নাকি?  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
কেন
  হবেনা? এ হল রাজ আদেশ। করতেই হবে।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
অত
  সোজা নয় মন্ত্রী মশাই, সব কিছুকে চামড়া দিয়ে মুড়ে দেওয়া । | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
কেন?
  এ যে রাজ সিংহাসন বাঘের চামড়া দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভাবেই সব কিছু মুড়ে
  দেবে।  | 
  | 
রাজা
   | 
 এর জন্য টাকার কোনো অভাব হবেনা। অর্থমন্ত্রীকে
  দিয়ে আমই খরচটা পাশ করিয়ে নেব।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
মহারাজ,
  অপরাধ নেবেননা। কাজটা সহজ মোটেই নয়। অনেক চামড়া লাগবে। অত চামড়া আমি পাব কোথায়?  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
লাগলে
  লাগবে। তুমি যত জন্তু পার মেরে তাদের চামড়া দিয়ে গোটা রাজ্যটাকে মুড়ে দাও। এক
  ফোঁটা ধুলো যেন কোথাও না থাকে।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আমি
  তো সেটাই বোঝাতে চাইছি। জন্তু জানোয়ার মারা এতো সহজ কাজ নয় মহারাজ। আইনের আওতায়
  পড়ে যাবেন।  | 
  | 
রাজা | 
কেন?
  পোষা জন্তু মেরে সেই চামড়া দিয়ে কাজ কর। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
দেখ,
  বেশী বুদ্ধি ফলাসনা। যা বলছি তাই কর। আজ থেকেই কাজ শুরু করে দে।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
কী
  যে বলেন মন্ত্রীমশাই, অত জন্তু আমই পাই কোথায়? তারপর সব জন্তু মারলেই তো হবেনা।
  তাদের চামড়া নিয়ে অনেক কারিকুরি করতে হবে।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
কারিকুরি
  আবার কি? তোমাকে বেশী কারিকুরি করতে হবেনা। জন্তু মারবি, চামড়া ছাড়াবি আর বিছিয়ে
  দিবি। সোজা কাজ। | 
  | 
চর্মকার
   | 
মহারাজ
  আপনার এই মন্ত্রীকে এবার পেনসন দিয়ে দিন। কিছুই জানে না।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
কিছুই
  জানিনা মানে? জানিস আমি তোর গর্দান নিতে পারি।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
তা
  পারেন আজ্ঞে, কিন্তু আমই কিন্তু ঠিক কথাই বলছি। চামড়ার কাজ অত সোজা না।  | 
  | 
রাজা
   | 
এই
  যে তুমি এত চামড়ার কাজ করছ এগুলো তা হলে করছ কী করে? তুমি হলে আমার রাজ্যের
  চর্মকার... | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে
  মহারাজ আমি চর্মবিদ। আমি চর্মবিদ্যা জানি।  | 
  | 
রাজা
   | 
সে
  আবার কি বিদ্যা।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
চামড়া
  কে কি করে মানুষের কাজে লাগানো যায় সে বিদ্যা। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
ওটা
  আবার কোনো বিদ্যা হল নাকি? চামড়া তো চিরকালই মানুষের কাজে লেগেছে। তা আবার
  বিদ্যা হল কবে? | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে
  মহারাজ, চামড়াকে অত হেলাফেলা করবেননা। এটাও একটা বিদ্যা। এটাও শিখতে হয়।  | 
  | 
রাজা
   | 
তাই
  নাকি? এটা তো জানা ছিলনা। আমি ছবি দেখেছি প্রাচীন কালের মানুষেরা চামড়ার পোষাক
  পরে ঘুরে বেরাতো। ওরাও কি এই সব বিদ্যা জানত?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আধুনিক
  মানুষের মত এতটা জানত না। ওরা জন্তুর চামড়া ছাড়িয়ে তাকে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার
  করত। ফলে সেই চামড়া কিছুদিন পরেই আর ব্যবহার করা যেতনা।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
তখন
  তো জন্তুজানোয়ারের অভাব ছিলনা। কাজেই চামড়ারও অভাব হতনা।  | 
  | 
রাজা
   | 
ঠিক
  বলেছ মন্ত্রী। আমার এই সিংহাসনের বাঘছাল পুরোনো হয়ে গিয়েছে। বদলাব ভাবছি, কিন্তু
  হয়ে উঠছেনা। | 
  | 
চর্মকার
   | 
খবরদার
  ওই কাজ করবেননা মহারাজ। বাঘ মারলেই হাতে দড়ি পড়বে।  | 
  | 
রাজা
   | 
ঠিক
  আছে, ঠিক আছে। এবার বল চামড়া কি করে কাজের উপযুক্ত করে বানানো হয়।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
মহারাজ,
  বাংলায় দেহের চামড়া আর কাজের চামড়া দুটই এক। কিন্তু ইংরাজিতে দেহের চামড়াকে বলে
  হাইড। মানে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়ার পরে আমরা পাই হাইড।  | 
  | 
রাজা
   | 
বাঃ
  বেশ মজার কথা তো, হাইড। আর তৈরি চামড়াকে কি বলে?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে
  ওটাকে বলে লেদার। আমরা যা করি তা হল হাইডকে লেদারে পরিবর্তিত করি।  | 
  | 
রাজা | 
বাঃ
  বেশ বলেছ।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে
  মহারাজ। লেদার হল জন্তু জানোয়ারের কাঁচা চামড়া, নরম, সহজেই পচে যায়  । আর লেদার হল স্থায়ী, শক্ত, বাহারি একটা
  জিনিস, যা দিয়ে আপনি ইচ্ছেমত কাজ করতে পারবেন।  | 
  | 
রাজা
   | 
তাইতো
  দেখছি। আমার এই সিংহাসনের চামড়াটা কম করে একশো বছরের পুরোনো হবে। কিন্তু এখনো কত
  সুন্দর আছে।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
আর
  দেখুন আমার এই কটিবন্ধ, এটাও কম পুরোনো নয়।  | 
  | 
রাজা
   | 
বাজে
  কথা রাখ, মন্ত্রী। বেশ চর্মকার, না না চর্মবিদ, বল, চামড়া কি করে কাজের উপযুক্ত
  করা হয়।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
সে
  মহারাজ অনেক কথা, আপনার মন্ত্রী মশাইয়ের অত কথা ভালো লাগবেনা। | 
  | 
্রাজা
   | 
ভাল
  না লাগলে ওকে মন্ত্রী থেকে প্রতিহারি বানিয়ে দেব। কি বল মন্ত্রী?  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
না না
  মহারাজ। আমার খুব ভালো লাগছে। কি সুন্দর সব জ্ঞানের কথা। চর্মবিদ ভাই, বলে যাও
  তোমার যত কথা আছে সব বলে যাও।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
মহারাজ,
  চামড়া পাওয়া যায় অনেক ধরণের জন্তু জানোয়ারের কাছ থেকে। যেমন গরু, মোষ, ছাগল,
  ভেড়া, শুয়োর ইত্যাদি। আবার নানা ধরণের সরিসৃপ, যেমন সাপ, কুমীর এদের চামড়াও খুব
  বাহারী আর কাজের।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
বাব্বা,
  এস চামড়া তুমি পাও কোথায়?  আমার স্ত্রীর
  একটা কুমীরের চামড়ার হাতব্যাগের খুব ইচ্ছে ছিল।  | 
  | 
চর্মকার | 
ওসব
  ভুলে যান মন্ত্রী মশাই। সাপ কুমীরের চামড়া আর পেতে হচ্ছে না। হাতে দড়ি পড়বে। | 
  | 
রাজা
   | 
আঃ
  কি হচ্ছে? আবার বাজে কথা শুরু হয়ে গেল। আমই মরছি নিজের জ্বালায়।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
তা
  হলে বলি? কাঁচা চামড়া থেকে পাকা চামড়া করার হ্যাঙাম অনেক আর সময় ও লাগে প্রচুর।
  আপনি এই চামড়ার টুকরোটা হাতে নিয়ে দেখুন মহারাজ। | 
  | 
রাজা
   | 
কই
  দেখি। তাই তো! কি সুন্দর! পাতলা আর নরম। রঙটাও কি সুন্দর। আচ্ছা এটা কিসের চামড়া
  ?  | 
  | 
চর্মকার | 
ভেড়ার। | 
  | 
রাজা
   | 
ভেড়ার?
  তা হলে এর লোমগুলো গেলো কোথায়?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
ওটাই
  তো আমাদের কেরামতি। প্রাচীন কালে মানুষ এই কেরামতিটা জানত না। তাই তাদের চামড়ার
  পোষাকে লোম থাকত। এই লোম মুক্ত করা একটা আধুনিক টেকনিক।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
কাঁচা
  চামড়ায় দুর্গন্ধ হয় না? সেটা কি করে চলে যায়?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে,
  ওটাই তো চর্মবিদদের কাজ। কাঁচা চামড়া বা হাইড নানা রাকাম পদ্ধতির মধ্য দিয়ে গিয়ে
  তবে পাকা চামড়া হয়। তখন তাতে দুর্গন্ধ থাকে না।  | 
  | 
রাজা
   | 
তুমি
  কিন্তু বড্ড ধানাই পানাই করছ। আসল কথাটা বলছ না।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
বলছি
  মহারাজ, সব বলছি। কাঁচা চামড়াকে পাকা করার কাজকে বালে ট্যানিং।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
ক্যানিং?
   | 
  | 
চর্মকার
   | 
ক্যানিং
  নয় মন্ত্রী মশাই, কথাটা হল ট্যানিং। এটা চামড়া পাকা করার পদ্ধতি।  | 
  | 
রাজা
   | 
মন্ত্রী,
  তোমার কানটা একটু দেখাও। যাকগে, যে কথা হচ্ছিল। ট্যানিং বস্তুটি কি জিনিস তা
  একটু বুঝিয়ে বলতো ভাই চর্মবিদ।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আজ্ঞে,
  ট্যানিং এর মধ্যে তিনটি ধাপ আছে। প্রত্যেকটা ধাপ বেশ জটিল আর সময় সাপেক্ষ।  | 
  | 
রাজা
   | 
কিরকম?
  সেই তিন ধাপ?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
প্রথম
  ধাপে চামড়াটা ট্যানিং এর জন্য তৈরি করা হয়। সে বিস্তর খাটনির ব্যাপার। এখানে
  প্রায় পাঁচটি স্তর আছে। প্রথমে চামড়ার থেকে জল বা জলীয় ভাব দূর করা হয়। তার জন্য
  চামড়াটাকে নুনের মধ্যে রাখা হয়।  | 
  | 
রাজা
   | 
বুঝেছি,
  নুন সব জল শুষে নেয়।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
ঠিক
  বলেছেন মহারাজ। এই ধাপে চামড়াগুলিকে পরপর একটার ওপর একটা স্তুপ করে একটা ঢালু
  মেঝের ওপর রাখা হয়। চামড়াগুলির অপর ভালো করে নুন ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ধাপকে বলে
  কিউরিং। | 
  | 
রাজা
   | 
এর
  জন্য কতদিন সময় লাগে?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
সমস্ত
  জল শুকিয়ে যেতে আর চামড়ার নুন শোষণ করতে ত্রিশ দিন সময় লাগে।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
ত্রিশ
  দিন? বল কি?  | 
  | 
চর্মকার | 
এই
  সময় কাঁচা চামড়ার থেকে খুব দুর্গন্ধ বের হয়। একমাত্র যারা এই কাজে অভ্যস্ত তারা
  ছাড়া আর কেঊ সেখানে থাকতে পারে না।  | 
  | 
রাজা
   | 
ঠিক
  কথা। তারপর কি হয়? | 
  | 
চর্মকার | 
এর
  পরে চামড়াগুলিকে জল দিয়ে ধোয়া হয়। এর জন্য একটা ঘুরন্ত ড্রামের মধ্যে
  চামড়াগুলিকে ফেলে তার ভেতর দিয়ে ঠান্ডা জল প্রবাহিত করা হয়।  | 
  | 
রাজা
   | 
বুঝেছি,
  এর ফলে ছামড়ার সব নোংরা জিনিস আর লবন ধুয়ে চলে যায়। | 
  | 
চর্মকার | 
শুধু
  তাই নয় কাঁচা চামড়াটা এর ফলে একটু ফুলে যায়। এর জন্য সময় লাগে পনের থেকে কুড়ি
  ঘন্টা।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
তা
  ভাল। কিন্তু তখন কি চামড়ার গায়ে লোম লেগে থাকে?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
হ্যাঁ
  লোম তখন পর্যন্ত থাকে। এর পরে হল লোম অপসারণের পালা। সমস্ত কাঁচা চামড়া বা
  হাইডগুলিকে এক ধরণের অ্যালকালির দ্রবণে চুবিয়ে রাখা হয়।  | 
  | 
রাজা
   | 
অ্যালকালি
  মানে? | 
  | 
চর্মকার
   | 
মানে
  হল এক ধরণের ক্ষারকীয় দ্রবণের মধয়ে চামড়াগুলিকে রাখা হয়। এই দ্রবণের নাম হল লাইম
  লিকার।  | 
  | 
রাজা
   | 
বেশ
  নাম। চায়ের লিকারের মত। এতেই সব লোম ঝরে যায়? | 
  | 
চর্মকার
   | 
এতে
  লোমগুলো আলগা হয়ে যায়। তারপর এক ধরণের মেশিণের সাহায্যে লোম আলাদা করা হয়।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
প্রথম
  পর্যায়ের তিনটে ধাপ পার হল। চতুর্থ আর পঞ্চম ধাপে কী করা হয়?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
বলছি।
  সবটাই রসায়ণ শাস্ত্রের ব্যাপার আর কি। যাক, পরের ধাপ হল ব্যাটিং।  | 
  | 
মন্ত্রই
   | 
ব্যাট
  দিয়ে পেটানো হয় নাকি?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আরে
  না না মন্ত্রই মশাই। এটাও রাসায়নিক পদ্ধতি। এখানে চামড়াগুলিকে অ্যাামোনিয়াম
  ক্লোরাইডের একটা দ্রবণ দিয়ে প্রসেস করানো হয়। এর ফলে আগে যে লাইম দেওয়া হয়েছিল
  তা চলে যায়। চামড়ার ফোলা ভাবও তাতে কমে যায়। আর চামড়া উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
বাঃ
  বেশ তো!  | 
  | 
চর্মকার
   | 
এই
  ব্যাটিং করার পরেই চামড়া প্রায় পাকা হয়ে যায়। তখন চামড়ার ওপর নখ দিয়ে আঁচড় দিলে
  বেশ দাগ পড়ে যায়।  | 
  | 
রাজা
   | 
তারপর,
  তারপর? বেশ ভাল লাগছে শুনতে। | 
  | 
চর্মকার
   | 
শুনে
  আনন্দ পেলাম মহারাজ। তারপর শুনুন। এই ব্যাটিং হয়ে যাওয়ার পর চামড়াটিকে নিয়ে অ্যাসিডের
  দ্রবণে চুবিয়ে রাখা হয়। এই ধাপটির পরেই চামড়া ট্যানিং এর উপযুক্ত হয়ে ওঠে। | 
  | 
রাজা
   | 
এখনো
  বাকি আছে?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আচে
  বই কি। ট্যনিং করেই তো চামড়া স্থায়ী আর সুন্দর করে তোলা হয়। এটাই আসল ধাপ। এই
  ট্যানিং না হলে চামড়া কাজের উপযুক্ত হয়ে ওঠেনা।  | 
  | 
রাজা | 
ট্যানিং
  এর ওকি অনেকগুলো ধাপ আছে?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
ট্যানিং
  দুধরণের। এক রকম হল ভেজিটেবিল ট্যানিং। এর জন্য চেস্টনাট, ইউক্যালিপটাস, ওক
  ইত্যাদি গাছের বাকল থেকে নানা রাসায়নিক পদার্থ বের করে তাই দিয়ে ট্যানিং করা হয়।
  আর এক ধরণের ট্যানিং এর জন্য দরকার হয় ক্রোমিয়াম ধাতু। একে বলে ক্রোমিয়াম
  ট্যানিং।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
ভালো।
  চামড়ার পেছনে এত সব কান্ড আমার জানা ছিলোনা।  | 
  | 
রাজা
   | 
চামড়ায়
  রঙ করা হয় কিভাবে?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
সে
  কথাতেও আসছি। চামড়া ট্যান হয়ে গেলে তার সমস্ত রস কস শুকিয়ে যায়। এর ওপর তখন
  পালিশ চাপানো হয়। রঙ আর মোম দিয়ে পালিশ করা হয়। 
 | 
  | 
রাজা
   | 
(দীর্ঘ
  শ্বাস ফেলে) শুনতে বেশ ভালো লাগল চর্মবিদ মশাই। অনেক জ্ঞান লাভ হল। কিন্তু আমার
  সমস্যার তো সমাধান হলনা। | 
  | 
চর্মকার
   | 
সমস্যার
  সমাধান হবে রাজামশাই।  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
ঠিক
  কথা। সমস্যার সমাধান তো করতেই হবে। তা যাই হোক, যত দিন লাগুক তুমি ভাই চামড়া
  দিয়ে সব কিছু মুড়ে দেওয়ার কাজটা শুরু করে দাও।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
অপরাধ
  নেবেননা মহারাজ। আমই একটা অন্য বুদ্ধি দেব?  | 
  | 
রাজা
   | 
বেশ
  বল। শুনি কি তোমার বুদ্ধি।  | 
  | 
চর্মকার
   | 
আমই
  বলছি সারা পৃথিবীটাকে চামড়ায় না মুড়ে যদি আপনার পা দুখানিকে চামড়ায় মুড়ে দিই তা
  হলে কেমন হয়?  | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
সর্বনাশ!
  রাজা মশাই তা হলে হাঁটবেন কি করে? আর ঘুমুতে যাবেনই বা কি করে?  | 
  | 
চর্মকার
   | 
সব
  পারবেন, মহারাজ। এই তো আমই সাথে করেই নিয়ে এসেছি। একজোড়া জুতো। আপনি পরে ফেলুন।
  পরে হাঁটুন মহানন্দে । আবার যখন ঘুমুতে যাবেন এ দুট পা থেকে খুলে নিলেই হবে।  | 
  | 
রাজা
   | 
দেখলে
  তো মন্ত্রী, কেমন সুন্দর সমাধান হল। | 
  | 
মন্ত্রী
   | 
মহারাজ!
  এ ব্যাটা মহা চোর। এই বুদ্ধিটা সকাল থেকেই আমার মাথায় ঘুরছিল। ব্যাটা কি করে যেন
  সেটা জানতে পেরেছে।  |