কালিমার্কার ইনসপিরেশন
ঢেলে
কাঁচের গেলাস হাতে
তুলেছেন কবি।
কিছু দূরে তাঁর ঘন নীল ইন্ডিকা,
নীল চশমায় যুবক বেলার ছবি।
তিরিশ বছর প্রবাসে
কেটেছে দিন
মুঠোর ভিতর মোলায়েম সাকসেস।
দেশে ফিরেছেন
নস্টালজিয়া নিয়ে
বারদুয়ারিতে খুঁজতে পুরোনো রেশ।
এই পথ থেকে অনেক অনেক
শাখা
কাউকে দিয়েছে ঠিকানা বিহীন ঘর
কাউকে দিয়েছে সঙ্গিনী মদালসা
সেই স্মৃতি নিয়ে ঠোঁট মোছে কবিবর।
এতকাল পরে সবকিছু
ছায়াময়
কে জানে কোথায় পুরোনো
সে বন্ধুরা,
কোন শাখাপথে কে গিয়েছে
রসে মজে
ফিরে আসবেকি সেই দিকভ্রান্তেরা?
বারদুয়ারীতে ছবি
পাল্টায়নি কিছু
পুরোনো সেলার, ফিরিওলা গাঁটকাটা,
উঠতি আঁতেল ব্যার্থ
ডিরেক্টার
তুফান উঠছে স্মৃতির অতল ঘোলে।
বারদুয়ারিতে আসন্ন
সাঁঝবেলা
তিরিশ বছর আগেও নামত সাঁঝ
সাঁঝ নামতেই নতুন খোলস ফেলে
আসর জমাতো পুরোনো সে কোলকাতা।
সেদিনো এমনি সন্ধ্যা
বেলার হাওয়া
আগুন ঝরাতো কলমের মুখ থেকে
বিপ্লব, সেতো আসবেই ঠিক দিনে
ক্ষমতা আসবে পাইপগানের থেকে।
তারপর থেকে কেটে গেল
কত দিন
বিপ্লব হল প্রেমিকা অধরা ধরা
কলমের থেকে আগুন নিবিয়ে দিয়ে
শুরু হয়ে গেল গ্লোবাল
পাঠক ধরা
একটু অদুরে দুখানা
টেবিল ছেড়ে
চোখে পড়ে এক পুরোনো
দিনের ছবি
কাঁধে ঝোলা ব্যাগ পরণে ময়লা ধুতি
অনিমেষ নয়?
বাহাত্তুরের কবি?
পায়ে পায়ে গিয়ে সামনে
দাঁড়ায় কবি
চিনলে কি ভাই? চিনলে কি কমরেড?
আমি সেই কবি, মনে আছে ‘স্পন্দন’?
মনে আছে সেই বাড়িতে পুলিশ রে’ড?
মার্কিনি ঢঙে মধুমাখা
কমরেড
শুনে অনিমেষ ভাবে এলো কোন শালা?
খোচর নয়তো! নাকি নব গবেষক?
ভর সন্ধ্যায় এ আবার কোন জ্বালা!
কবির হৃদয়ে অভিমান জমে
ওঠে।
পুরোনো বন্ধু, চিনতে
কি পারলেনা?
মনে নেই সেই স্বজন হারানো
রাত?
মনে নেই, সেই উন্মাদ
বিভীষিকা?
মনে নেই সেই শত শত লাশ
জমা
দমদম আর বরানগরের পথে?
সেদিন থেকেই তুমি আমি
পলাতক
সেই শেষ দেখা বাহাত্তরের রাতে।
স্মৃতির খোঁচায় চোখ
খোলে অনিমেষ
বেড়ে জামা গায়ে, পরণে নতুন জিনস
চেনা মনে হয় নেশায়
ঝাপসা লাগে
হাত তুলে বলে এসো এসো
বস পাশে।
তুমি আমি কেন, সবাই
পালিয়ে গেছে
শরীরের থেকে পালিয়েছে যৌবন,
কবে পলাতকা প্রেমিকা
সুরঞ্জনা!
পালিয়ে গিয়েছে কাব্য পিয়াসী মন।
পালিয়ে গিয়েছে নতুন
দিনের আলো
হৃদয়ের থেকে বিপ্লব
পলাতক
যেদিকে তাকাই বন্ধুর দেখা নাই
শুধু জমে আছে ব্যার্থ
স্মৃতির স্টক।
সেটুকু ঢাকতে সন্ধ্যায়
এসে বসি
দুই তিন গ্লাসে সব ব্যাথা কর্পুর
তুমি তো বন্ধু রয়েছ যে বেশ তাজা
কাব্য বেচার রসে টই টুম্বুর।
আমাদের কবি তার পাশে
গিয়ে বসে।
আমারও বন্ধু বদলে গিয়েছে দিন
যারা পালিয়েছে তারা
হারিয়েছে সব
যারা মরে গেছে তারা শুধু অমলিন।
কবি বসে ভাবে এই
চেকনাই ছাড়া
আমার কিছু কি জমে আছে সঞ্চয়?
আকাশে এখনও বোমারু
বিমান ওড়ে
বুকের ভিতর জমেছে
মৃত্যুভয়।
কবিতা লিখেছে
অধ্যাপনার ফাঁকে
কাব্যে এনেছে অশান্ত
কোলকাতা
বাজারে খেয়েছে
অভিজ্ঞতার শাঁস
পকেটে ঢুকেছে মুঠোভরা
সফলতা।
কবিতার হাটে বেচেছে
দুঃসময়
বেচেছে দেশের অসহায় মুখগুলি
কাব্য বেচতে জাগিয়েছে এতকাল
মনের ভিতরে চোরাপথ, ঘুলঘুলি।
এখোনো মাটিতে ধেয়ে চলে
বন্দুক
এখোনো রক্তে ভেসে যায় টাইগ্রিস।
একটি দেশের যত
রণহুঙ্কার
অন্য দেশকে কাঁদায়
অহর্নিশ।
Ì
রাত হয়ে আসে, দুই
বন্ধুর মুখে
কথা নেই কিছু, বুকের ভিতরে ক্ষত
সেইখানে কিছু ছাই পড়ে
আছে, আর
স্মৃতি পড়ে আছে দুঃস্বপ্নের মত।।
দারুণ ...একটা সময়...তার পরবর্তী ইতিহাস ...তথাকথিত আগুন-ঝরা কমরেডের দলের পরিযায়ী পাখিদের মতন সাম্রাজ্যবাদের মরুদ্যান আমেরিকায় গমন ...ইত্যাদি প্রভৃতি ...এত অল্প কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন... বারদুয়ারীর মতন একটি বিখ্যাত বা কুখ্যাত ঐতিহাসিক স্থানের প্রেক্ষাপটে ... :-)
ReplyDeleteআমিঅ আপনার মত দু- ভাষায় দুটি ব্লগ চালাই ...বাংলা ব্লগের লিঙ্ক টি দিলাম এখানে... সময় পেলে দেখবেন এবং মতামত জানাবেন... :-)
http://nijermoneblogblog.wordpress.com/